
বোলপুর, বীরভূম, ২৭/০৬/২০২৫
বীরভূমের কঙ্কালীতলায় রথযাত্রা শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং তা আঞ্চলিক সংস্কৃতি, লোকজ ঐতিহ্য ও ভক্তির গভীর আবেগে গাঁথা এক ব্যতিক্রমী পরম্পরা। সতীপীঠ মা কঙ্কালীতলার উদ্দেশে আয়োজিত এই রথযাত্রা—যেখানে রথে মা কঙ্কালীর ছবির পাশাপাশি স্থান পায় জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের মূর্তি—পেয়েছে এক অনন্য মাত্রা।
যদিও এই রথের সঠিক বয়স নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে ইতিহাস, লোকবিশ্বাস ও অলৌকিক ঘটনার ছোঁয়ায় রথটি আজও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মন্দিরের সেবায়েত জয়ন্ত চৌধুরীর কথায়, “আগে বাঁশের রথ ছিল। ২০০৬ সালে কাঠ ও লোহার কাঠামোয় নতুন রথ নির্মিত হয়। একবার এক সেবায়েতের মেয়ের মৃত্যুতে রথযাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেই রথ নিজেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল—এই অলৌকিকতাই রথকে ঘিরে ভক্তির আবেগকে আরও দৃঢ় করেছে।”
রথের দিনে শুরু হয় ধর্মীয় পুজো ও যজ্ঞ। রথ টানার আগে গ্রাম্য পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণে শুরু হয় রথযাত্রা। বিকল্প বিগ্রহ বসিয়ে, হরিনাম সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে রথ ঘোরানো হয় আশপাশের গ্রামে। দড়ি টানার সময় স্থানীয়দের মধ্যে পড়ে হুড়োহুড়ি—ভক্তি, আবেগ আর উৎসাহে তৈরি হয় প্রাণবন্ত পরিবেশ।
এই রথকে ঘিরে স্থানীয় লোকসংস্কৃতি যেমন ঝুমুর, বাউল গান, পালাগান—নতুন প্রাণ পায়। মন্দির প্রাঙ্গণে বসে ছোট মেলা, যেখানে বিক্রি হয় হস্তশিল্প, খাদ্যদ্রব্য, জিলিপি ও পাঁপড়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে কঙ্কালীতলার রথযাত্রা পরিণত হয় এক সামাজিক মিলনমেলায়। এখানে ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি উঠে আসে গ্রামীণ জীবনের সজীব ছাপ, ইতিহাসের অলৌকিকতা ও লোকসংস্কৃতির গভীর শিকড়।
এক কথায়, কঙ্কালীতলার রথ—ভক্তি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক চিরন্তন সংলাপ।