
কলকাতা, বুধবার, ২৫/০৬/২০২৫
ক্রমশ বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। এই অবস্থাকে বিপদসঙ্কেত হিসেবেই দেখছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। ওয়ার্ল্ড মেটিওরলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (WMO) সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, যেখানে সমুদ্রের গড় বার্ষিক জলস্তর বৃদ্ধির হার ৩.৭ থেকে ৩.৮ মিলিমিটার ছিল, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ মিলিমিটারে। ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে, বিশেষত বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে এই বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্ট, যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরীর মতে, “এই জল মাটির নীচের জলের সঙ্গে মিশলে তাকেও লবণাক্ত করে দেবে। তখন সেই জল আর পান করার উপযোগী থাকবে না।” বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জলস্তর বৃদ্ধির এই গতি বজায় থাকলে ভূগর্ভস্থ জলে মিশে যেতে পারে সমুদ্রের নোনা জল। যার ফলে কলকাতা শহর ও আশেপাশের এলাকায় মিষ্টি জলের চরম সংকট দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবন ও পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও ভাঙনের ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মাছচাষি পরমানন্দ মণ্ডল ও মৌসুনির বাসিন্দা রবীন মণ্ডল জানাচ্ছেন, প্রকৃতির রোষে প্রতি বছর ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে। যদি জলস্তর আরও বাড়ে, তবে অনেক দ্বীপ চিরতরে ডুবে যেতে পারে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন ও বরফ গলে যাওয়া। পরিবেশবিদরা বলছেন, শুধু গাছ লাগিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। ব্যক্তি পর্যায়ে কার্বন নিঃসরণ কমানো জরুরি। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ‘আপার অ্যান্ড লোয়ার ডেল্টা সুন্দরবন’ প্রকল্পের মাধ্যমে মৃতপ্রায় খাল পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে কলকাতা সংলগ্ন খালগুলির সংস্কার এবং দ্বিতীয় ধাপে সুন্দরবনের ইছামতী, বিদ্যাধরী ও মাতলা নদী এবং খালগুলির সংস্কার করা হবে। প্রকল্পের ৭০% অর্থ দিচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, বাকি অংশ রাজ্য সরকারের তরফে খরচ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, আগামী দশকে কলকাতাসহ পূর্ব ভারতের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে জলসংকট এক ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।