
ফারাক্কা, মুর্শিদাবাদ, ২৪/০৬/২০২৫
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ফের একবার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়ে তুলল। ধর্মীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে মুসলিম কারিগরের হাতে তৈরি হল হিন্দু ধর্মের অন্যতম বড় উৎসব রথযাত্রার রথ। ফরাক্কার নিশিন্দ্রা ঠাকুর পাড়ার তনুশ্রী মিত্রদের উদ্যোগে তৈরি হল ছয় ফুট উচ্চতার একটি লোহার রথ—আর সেই রথ নির্মাণ করলেন মুসলিম কারিগররা।
তনুশ্রী মিত্র জানান, দীর্ঘদিন রথযাত্রা বন্ধ থাকার পর গত বছর ছোট রথ তৈরি করেছিলেন তারা। এবার গ্রামের মানুষ মিলে বড় রথ বানানোর পরিকল্পনা করেন। একাধিক দোকানে ঘুরেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে ফরাক্কার খুন্তিপাড়া মেলা গেটের কাছে একটি গ্রিলের দোকানে যোগাযোগ করেন তাঁরা। দোকানের মালিক মোরসেলিম শেখ এক কথায় কাজটি গ্রহণ করেন। অসীম খান ও আমিরুল শেখকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে তৈরি করে ফেলেন রথটি।
এই রথে প্রায় ৫৫ কেজি লোহা ব্যবহার হয়েছে। দৈর্ঘ্য আড়াই ফুট, উচ্চতা ছয় ফুট। রথটি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায়। মোরসেলিম শেখ বলেন, “ধর্মের নামে কোনও ভেদাভেদ নেই। হিন্দু-মুসলিম আমরা ভাই ভাই। এমন একটি পবিত্র কাজে অংশ নিতে পেরে আমি গর্বিত।”
কারিগর আমিরুল শেখও বলেন, “এই কাজ করতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে জগন্নাথ ঠাকুর ঘুরবেন আমাদের তৈরি রথে—এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”
এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি রথ বানানো নয়, বরং সমাজকে একজোট থাকার, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকার বার্তা দেয়। দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ যেমন সমস্ত ধর্মের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে, তেমনি ফরাক্কার রথও পৌঁছে দিল সম্প্রীতির অনন্য বার্তা।
এ যেন সত্যিই মুর্শিদাবাদের মাটিতে সম্প্রীতির এক শুভযাত্রা।