
রামপুরহাট, তারাপীঠ, বীরভূম, ২৭/০৬/২০২৫
সারা বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও তারাপীঠে শুরু হয়েছে তারামায়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ, নাটোরের রাজা ও তারাপীঠের জমিদার সাধক রামকৃষ্ণের উদ্যোগে সূচিত এই ব্যতিক্রমী রথ উৎসব আজও একই আবেগে মেতে ওঠে আপামর ভক্তকুল। পরবর্তীকালে রামখ্যাপার আবির্ভাবে এই উৎসব পায় এক অলৌকিক মাত্রা—যার ধারাবাহিকতা চলে আসছে যুগের পর যুগ।
তারাপীঠের রথ এক অনন্য ব্যতিক্রম। যেখানে জগন্নাথ নয়, স্বয়ং তারামা জগন্নাথতুল্য হয়ে রথে আরোহন করেন। তিনি একাধারে মা কালী, আবার তিনিই কৃষ্ণ—এই দ্বৈত রূপের উদ্ভাস দেখা যায় এই উৎসবে। বর্তমানে পিতলের তৈরি রথে দেবী রাজবেশে সজ্জিত হয়ে বিকেল ৩টে নাগাদ গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এসে গোটা তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করেন।
রথে চড়ে দেবীর এই মর্ত্যপরিক্রমা দেখতে ভক্তদের ঢল নামে শুধু বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ আশপাশের রাজ্য থেকেও। দেবীর রথে পুজো দেওয়া হয় চিড়ে, বাতাসা, পেড়া, এমনকি চকোলেট দিয়েও। পরে সেই প্রসাদ ছুঁড়ে দেওয়া হয় উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রথ পরিক্রমা শেষে মা ফেরেন গর্ভগৃহে, শুরু হয় বিশেষ আরতি ও পুজো।
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বর্তমানে ডাবল লেন রাস্তায় ভক্তদের সুবিধা হয়েছে। একটি লেন দিয়ে দেবীর রথ চলে, অন্যটিতে ভক্তরা দাঁড়িয়ে দর্শন করেন। নিরাপত্তার জন্য পুলিস মোতায়েন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
রথযাত্রাকে ঘিরে বসেছে মেলা, এসেছে কীর্তনীয়া দল, বাজছে ঢোল-কাঁসর। ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভক্তির এই অপূর্ব সমন্বয়ে তারামায়ের রথ উৎসব আজ শুধু এক আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়, এক ঐতিহাসিক ও সামাজিক আবেগের উৎসব।
এক দিনের জন্য দেবী নিজেই আসেন মর্ত্যে, আর সেই সাক্ষাৎ পেতে কানায় কানায় ভরে ওঠে তারাপীঠ।