
গজলডোবা, শিলিগুড়ি, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৫
তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জেরে গজলডোবায় শিলিগুড়ি পুরসভার মেগা জল প্রকল্পে ইনটেক ওয়েল তৈরির পরিকল্পনায় বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে যেখানে গাইড বাঁধ থেকে ৭৫ মিটার দূরে এই জল উত্তোলন কেন্দ্র তৈরির কথা ছিল, তা এখন ৫৫ মিটার দূরে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মেনে। কারণ, গত দেড় বছর আগে সিকিমে ঘটে যাওয়া হ্রদ বিস্ফোরণের ফলে তিস্তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে নদী প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা ব্যারেজের গাইড বাঁধের আরও কাছ ঘেঁষে। এর ফলে প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত জায়গা থেকে পর্যাপ্ত জল না পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য দুলাল দত্ত বলেন, “নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে পুরনো স্থানে ইনটেক ওয়েল তৈরি করলে ভবিষ্যতে জলের ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই নতুন স্থান নির্বাচিত করা হয়েছে। সেখানে সর্বক্ষণ তিস্তার জল পাওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।”
এই ইনটেক ওয়েল তৈরির পাশাপাশি গাইড বাঁধকে আরও মজবুত করার কাজও হাতে নেওয়া হবে, যার জন্য সেচ দপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তবে এই প্রকল্প নিয়ে একটি বড় বাধা এখনও কাটেনি। কারণ, ইনটেক ওয়েল তৈরির জায়গাটি বন্যপ্রাণীদের করিডরের অংশ। পাশেই রয়েছে পাখিরালয় ও নদীর জল পান করতে আসা বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান। সেই কারণে এই কাজের জন্য কেন্দ্রীয় ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন।
উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণী) ভাস্কর জেভি জানিয়েছেন, প্রকল্প সংক্রান্ত নথিপত্র রাজ্য ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড যেটা উপযুক্ত মনে করবে, সেইমতো পদক্ষেপ নেবে।”
এদিকে, অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকলেও মেগা জল প্রকল্পের অন্যান্য নির্মাণ কাজ শেষ করার দিকে জোর দিয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। কারণ এই প্রকল্প শিলিগুড়ি সহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার জলের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তিস্তার পরিবর্তিত গতিপথ প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তেমনই জল সরবরাহের বাস্তবতাকেও সামনে এনেছে, যা ভবিষ্যতের নগর পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।