
নদিয়া ,শনিবার ২৭/০৬/২০২৫
কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের তৈরি এই প্রাসাদ তার স্থাপত্যশৈলী, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য আজও হাজারো মানুষকে মুগ্ধ করে। জেনে নিন এর ইতিহাস, দর্শনার্থীদের তথ্য ও ভ্রমণ নির্দেশিকা।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, যা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদ নামেও পরিচিত, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে অবস্থিত। এটি ১৮ শতকে নির্মিত একটি রাজকীয় স্থাপত্য, যেখানে বাংলার নবাবি যুগের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও রাজসিক স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ দেখা যায়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭২৮–১৭৮২) নদিয়ার বিখ্যাত রাজপরিবারের একজন প্রভাবশালী জমিদার ও সংস্কৃতিপ্রেমী শাসক ছিলেন।
১৮শ শতকে বাংলার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জাগরণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি ছিল তাঁর প্রশাসনিক কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র এবং ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলও।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্থানের সময় কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। রাজবাড়ি নির্মাণ ছিল সেই কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি অংশ, যেখানে ব্রিটিশ অফিসাররা অতিথি হয়ে আসতেন এবং বিভিন্ন আলোচনা হতো।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন তৎকালীন নদিয়ার জমিদার, যিনি সংস্কৃতি, কলা ও জ্ঞানচর্চার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।এই প্রাসাদ ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্নে রাজাদের ভূমিকা, সিপাহি বিদ্রোহসহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।প্রাচীন নবাবি ও ইউরোপীয় স্থাপত্যের মিশ্রণ ,বাগানঘেরা বিশাল চত্বর ,সুদৃশ্য বারান্দা, খিলানযুক্ত ফটক ও নকশাদার দরজা, রাজাদের ব্যবহৃত আসবাব ও শিল্পকর্মের নিদর্শন (আংশিক সংরক্ষিত)
কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দুর্গাপূজা বহু প্রাচীন এবং অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ।রাজপরিবার এখনও অনেক ঐতিহ্য রক্ষা করে চলছে এই পূজার সময়। এছাড়া সংগীত, নাটক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজিত হয়।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র শুধু একজন জমিদার নন, ছিলেন এক দূরদর্শী শাসক, যিনি রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন। এই রাজবাড়ি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের এক প্রতীক হিসেবে।