
কলকাতা, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৫
রাজ্যে রেজিস্টার্ড হলেও বহুদিন ধরে নির্বাচনী ময়দানে দেখা নেই—এমন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অবশেষে কড়া অবস্থান নিল নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া ৮টি অস্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে শোকজ করতে চলেছে কমিশন। এই মর্মে ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দলগুলির কাছে শোকজ নোটিস পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে রাজ্য নির্বাচন দপ্তর সূত্রে।
কমিশনের নজরে আসা ওই ৮টি দল হল— অল ইন্ডিয়া তফসিলি ইউনাইটেড পার্টি, বঞ্চিত স্বরাজ পার্টি, বাংলা বিকাশবাদী কংগ্রেস, ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট পার্টি (প্রবোধচন্দ্র), ইন্ডিয়ান ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস, ইন্ডিয়ান পিপলস ফরওয়ার্ড ব্লক, মূল নিবাসী পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং (কমিশনের তালিকায় উল্লিখিত আরও একটি দল)।
সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে নির্বাচন কমিশন একটি সার্বিক সমীক্ষা চালিয়ে দেখতে পায়, এই দলগুলির কোনও কার্যকরী সংগঠন নেই, নেই কোনও রাজনৈতিক কার্যকলাপ বা জনসংযোগ। এমনকি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন বা তার পরবর্তী কোনও উপনির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচনেও এই দলগুলির উপস্থিতি ছিল না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের রেজিস্টার্ড অফিসের ঠিকানা অচল, ফোন নম্বর বন্ধ কিংবা কেউ রিসিভ করছেন না। কমিশনের একাধিক নোটিস বা যোগাযোগ চেষ্টার জবাবও দেয়নি তারা। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, এই দলগুলি কেবলমাত্র কাগজে-কলমে রেজিস্টার্ড থাকলেও বাস্তবে তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই।
এই কারণেই সংশ্লিষ্ট দলগুলিকে শোকজ নোটিস পাঠিয়ে জবাবদিহির সুযোগ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তাদেরকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, কেন তাদের রেজিস্টার্ড রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল করা হবে না। যদি তারা যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দলগুলিকে চিরতরে রেজিস্টার্ড তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য। কারণ, অনেক সময় রাজনৈতিক দল হিসেবে রেজিস্ট্রেশন থাকলেও বহু সংগঠন শুধু নামেই দল চালায়, প্রকৃত রাজনৈতিক কাজকর্ম থাকে না। কেউ কেউ আবার এই পরিচয় ব্যবহার করে কর ফাঁকি, অর্থপাচার বা প্রভাব বিস্তারের মতো অসৎ উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে।
কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, “প্রথম দফায় আটটি দলকে শোকজ করা হলেও পরবর্তীকালে আরও অস্বীকৃত দলগুলির বিরুদ্ধেও এমনই পদক্ষেপ করা হবে। আমরা চাই, যে দলগুলো রেজিস্টার্ড হয়েছে তারা যেন সত্যিকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও জনসংযোগ চালায়। কেবলমাত্র নামকাওয়াস্তে সংগঠন হয়ে থাকার কোনও মানে হয় না।”
এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাদের মতে, অনেক সময় এইসব দল ব্যবহার হয় বড় দলের ‘ভোট কাটার’ হাতিয়ার হিসেবে বা ভুয়ো প্রচারে। তাই নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগে রাজনৈতিক পরিবেশ পরিষ্কার ও জবাবদিহিমূলক হবে বলে মত তাঁদের। তবে কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হতে পারে, তারা এখনও সক্রিয় রয়েছে—সে যুক্তির ভিত্তিতে কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সাল বা তার পরবর্তী কোনও নির্বাচনে এই দলগুলি অংশ নেয়নি, এমনকি একাধিকবার তাদের অফিসে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও সাড়া মেলেনি। ফোন নম্বর, ঠিকানা—সবই কার্যত অচল। যার ফলে এই দলগুলির অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে কমিশন।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, শোকজের জবাবে দলগুলিকে প্রমাণ করতে হবে তারা এখনো সক্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করছে। না হলে, তাদের নাম রেজিস্টার্ড রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হবে।
কমিশনের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, “এটা প্রথম ধাপ মাত্র। ভবিষ্যতে আরও অস্বীকৃত ও নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট বার্তা দিল—নামমাত্র রাজনৈতিক দল নয়, চাই সক্রিয় ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে অনেকে বলছেন, এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় ছিল।
এখন নজর থাকবে শোকজ পাওয়া দলগুলির জবাবের দিকে—তারা নিজেদের অবস্থান কতটা জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তার উপরই নির্ভর করবে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের ভবিষ্যৎ।