
নয়াদিল্লী, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৫
চাষবাসে আর মিলবে না ‘ফ্রি জল’। কৃষিকাজে জলের অপচয় রুখতে এবার চাষের জন্য ব্যবহৃত জলের উপর দাম বসাতে উদ্যোগী হল মোদি সরকার। আপাতত দেশের ২০টি রাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে চলেছে এই নতুন জলনীতি। পাইলট প্রকল্পের আওতায় নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট লাইনের মাধ্যমে কৃষিজমিতে নির্ধারিত পরিমাণ জল সরবরাহ করা হবে, যেখানে জলের অপচয় একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না।
এই প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকার ১,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী কৃষি রাজ্যের বিষয় হওয়ায়, রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাব পাঠিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। কৃষকের থেকে ঠিক কত টাকা নেওয়া হবে জলের জন্য, তা ঠিক করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। কেন্দ্র কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার মোদি সরকারের ১১ বছর পূর্তির সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সি আর পাতিল জানান, “দেশে কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয় প্রায় ৮৩ শতাংশ জল, যার একটি বড় অংশ অপচয় হয়ে যায়। আর শিল্পক্ষেত্রে যখন জলের জন্য টাকা দিতে হয়, তখন কৃষিক্ষেত্রেও একটি নিয়ন্ত্রিত ও মূল্যনির্ধারিত ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার কৃষকদের চাষের জন্য জল সরবরাহ করা হলেও তা হবে দামে ও নির্ধারিত পরিমাণে।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা চাই, জলের অপচয় বন্ধ হোক এবং কৃষকরা গুণমানসম্পন্ন জল পান। রাজ্য যদি দাম নিতে না চায়, সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু কেন্দ্র চাইছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক।”
এদিকে, একই সাংবাদিক সম্মেলনে সিন্ধু নদ সংক্রান্ত প্রশ্নে পাকিস্তানকে জল সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর। তবে প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত এখন সিন্ধু নদে জলের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।” এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, টুলবুল প্রকল্প, কিষাণগঙ্গা ও আরও চারটি প্রকল্প বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলির মাধ্যমে পাকিস্তানে অতিরিক্ত জল চলে যাওয়া রোখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তবে মন্ত্রী বলেন, “সিন্ধু ইস্যুতে আমি কিছু বলতে পারি না। সেটা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়।”
পাশাপাশি তিস্তা জলচুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠলে কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বর্তমানে এ বিষয়ে কোনও নতুন আলোচনা বা বৈঠক হচ্ছে না। ফলে তিস্তা ইস্যু আপাতত স্থগিত।
এই ঘোষণায় দেশের কৃষক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, জলের অপচয় রোধে উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজন, আবার কেউ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে চাষের খরচ আরও বাড়বে এবং ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা বিপদে পড়বেন। এখন দেখার, রাজ্য সরকারগুলি এই প্রস্তাবকে কীভাবে গ্রহণ করে এবং কীভাবে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করে জলনীতির নতুন পথ নির্ধারণ করে।