
কান্দি শুক্রবার, ২৭/০৬/২০২৫
বাংলির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর রথযাত্রার দিন থেকেই তা সুচনা করা হল। জানা যায়, প্রায় ৫০০বছরের প্রাচীন এই দুর্গাপুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিকল সিংহ। বর্তমানে রাজা নেই রাজ প্রাসাদ নেই । তবে আগে ভগ্নদশা ভুগলেও বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে বাঘডাঙ্গা জমিদার বাড়ি। পরিবারের বর্তমান সদস্যরা এই পুজো নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে আজও চালিয়ে আসছেন পুজো।
পরিবারের অন্যতম সদস্যরা জানিয়েছেন, বাঘডাঙ্গা ভাঙা বাড়ি নামেই খেত এই পুজো, বর্তমানে এই পুজো নাম বুড়িমার দুর্গাপুজো। আগে ভাঙা বাড়ি থাকলেও বর্তমানে মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। তবে ৫০০বছর আগে পুজো সুচনাকালীন দেবীর গায়ের রং ছিল গৌড়ি, বর্তমানে দেবীর গায়ের রং এবং শাড়ির রং এক আছে এবং দেবীর এখানে কোন রং পরিবর্তন করা হয় না। আগে যে রং পুজিত হয়ে এসেছেন বর্তমানে সেই রং পূজিতা হন দেবী মা দুর্গা। জিতা অষ্টমির দিনে এক বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।
প্রাচীন কালের এই পুজো দেখতে বহু দুর দুরন্ত থেকে মানুষ জন আসেন পুজো দেখতে। তবে এখানে সিংহ বদলে নরসিংহ দেখা যায়, রাজ আমলে বোধনের দিন থেকে ঘট এনে পুজো পাঠ করা হলেও বর্তমানে ষষ্ঠীর দিন থেকে ঘট এনে পুজো পাঠ শুরু করা হয় বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে বাঘডাঙ্গা জমিদারবাড়ি ভগ্নদশা কাটিয়ে নিয়ম নিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা এই প্রাচীন পুজো আজও চালিয়ে আসছেন।শুক্রবার থেকে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়েই এবছরের পুজোর সুচনা করা হল বলেই জানা যায় ।
রথের দিনে পেটকাটি মা দুর্গার কাঠামো পুজো দিয়ে পুজোর সুচনা পেটকাঠি মা দুর্গার কাঠামো পূজা বলতে সম্ভবত রঘুনাথগঞ্জের গদাইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপূজার সুচনা হল রথের দিনেই। এই পূজা ৪২০ বছরেরও বেশি পুরনো এবং “পেটকাটি দুর্গা” নামে পরিচিত। কাঠামো পূজা দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রতিমা তৈরির প্রক্রিয়ার সূচনা করে এবং উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে।
বাঙালির সব থেকে প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। রথের দিন থেকেই কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়েই সুচনা করা হয় দুর্গাপুজোর। কাঠামো পুজো বা খুটি পুজো হল দুর্গাপূজার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা। এটি প্রতিমা তৈরির কাজের সূচনা করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ দিনের উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়।
গদাইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এখানে মা দুর্গা “পেটকাটি দুর্গা” নামে পুজিত হন। জনশ্রুতি আছে, দেবীর পায়ে শিকল বাঁধা হয়, যা এই পুজোর একটি বিশেষত্ব।
মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন জনপদ রঘুনাথগঞ্জ। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার গেলেই আহিরণ। ঠিক তার পাশের গ্রাম গদাইপুর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে আখরি নদী। এই নদীর তীর থেকে মাটি এনেই দেবীপ্রতিমা গড়া হয়। দৈর্ঘ্য ৯ ফিট ও চওড়ায় ১৩ ফিট। কয়েকশো বছর ধরে মাপের কোনও হেরফের হয়নি।
৪০০ বছরেরও বেশি সময় আগে এই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। সেই সময় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার আর্থিক ভাবে সম্পন্ন ছিল। কথিত আছে, দুর্গাপুজোর জন্য এক দরিদ্র ব্রাহ্মণকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্ত্রী ও একমাত্র কিশোরী মেয়েকে নিয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মন্দিরের পাশে থাকতেন সেই পুরোহিত। কোনও এক বার সন্ধিপুজোর সময় পুরোহিতের মেয়ে পুজোর উপচার তৈরি করছিল। হঠাৎই সে নিখোঁজ হয়ে যায়।
এক মাত্র মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে দেবীর সেবায়েত মূর্তির সামনেই হত্যে দিয়ে পড়ে ছিলেন সারা রাত। সেই ভোরেই ব্রাহ্মণকে স্বপ্নে দেবী জানান, তাঁর মেয়ের রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি লোভ সামলাতে না পেরে গিলে ফেলেছেন।
পরের দিন দেবীর নির্দেশ মতোই পুজোয় ছাগ বলি দেওয়া হয়। এর পর দেবীপ্রতিমার পেট কেটে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। সেই থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবী পেটকাটি দুর্গা নামে পরিচিত। ক্রমে সেই গল্প লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে।
এখনও দেবী প্রতিমার মুখে এক টুকরো কাপড় লাগানো থাকে। পায়ে বাঁধা থাকে শেকল। সেই প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমা তৈরির সময় কেটে রাখা হয় পেট। মুখে আটকানো শাড়ির আঁচল ওই কিশোরীকে খেয়ে ফেলার প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে সেই থেকেই দেবীর পায়ে প্রতীকী শেকল পরানো থাকে।
শুক্রবার সকালে ঢাক ঢোল বাজনা সহকারে ঘট ভরে কাঠামো পুজো করা হয়। বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই পুজো না দেখলে গ্রামের মানুষের কাছে পুজো অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। পুজোর চার দিন বিশেষ ভোগ হয় মায়ের জন্য। অষ্টমী বাদে প্রত্যেকদিনই থাকে মাছ ও মাংসের ভোগ। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলাও হয় গ্রামে।