
নয়াদিল্লী, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৬
ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি বাদ দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে। দিল্লিতে ‘জরুরি অবস্থার ৫০ বছর’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি দাবি করেন, এই শব্দদুটি কংগ্রেস জরুরি অবস্থার সময় চাপিয়ে দিয়েছিল, যা এখন বাতিল করার প্রয়োজন।
হোসাবালের কথায়, “জরুরি অবস্থার সময় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল কংগ্রেস। তখন সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে শব্দ দুটি (সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ) জোড়া হয়েছিল, সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা আজ আর নেই।” তিনি কংগ্রেসের প্রতি তোপ দেগে বলেন, “ওই ঘৃণ্য কাজের জন্য এখন পর্যন্ত কংগ্রেস দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চায়নি। যারা সেই অপকর্ম করেছিল, তারাই এখন সংবিধান হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”
আরএসএস নেতার এই মন্তব্যের পরেই প্রবল প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লেখেন, “আরএসএস-বিজেপির সংবিধান নয়, মনুস্মৃতি চাই। তারা গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁদের গোলাম বানাতে চায়।”
কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “আরএসএস ও বিজেপি কখনওই ভারতীয় সংবিধানকে মেনে নেয়নি। ১৯৪৯ সাল থেকেই তারা আম্বেদকর ও নেহরুকে নিশানা করে আসছে। আজও তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল সংবিধান বদল করা।”
আরএসএস নেতার বক্তব্যে একরকম সমর্থন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, “দেশের যেকোনও ডানপন্থী নাগরিকই হোসাবালের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন। কারণ, মূল সংবিধানে এই শব্দগুলি ছিল না।”
প্রসঙ্গত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দদুটি ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে যোগ করা হয়েছিল।
আরএসএস নেতার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। বিরোধীদের মতে, এটি বিজেপি ও আরএসএসের দীর্ঘদিনের ‘হিডেন এজেন্ডা’-র অংশ, যার মাধ্যমে সংবিধানের মূল কাঠামোকে বদলানোর চেষ্টা চলছে। যদিও সঙ্ঘের দাবি, তারা কেবলমাত্র ঐতিহাসিক সত্যের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
এখন দেখার, সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে এই বিতর্ক রাজনৈতিক মহলে কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং এর জেরে আরও কী প্রতিক্রিয়া আসে বিভিন্ন মহল থেকে।