
কৃষ্ণনগর, নদীয়া, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৫
রথযাত্রা আসতেই জেগে উঠেছে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের প্রাণকেন্দ্র পালপাড়া। কড়া রোদ, গরম, খরচ বৃদ্ধির মাঝেও নীরবে কাজ করে চলেছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা। কাঠামো বাঁধা, খড় লাগানো, মাটি মাখানো, রং করা—প্রতিটি কাজে এখন জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি।
বিশেষত রথযাত্রা উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রতিমা। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ঝুলনের পুতুল ও বিভিন্ন মূর্তির মুখাবয়ব ও অলঙ্কার। শিল্পীদের কুশলতায় ফুটে উঠছে রঙিন রথযাত্রার রূপ।
তবে শিল্পীদের কণ্ঠে রয়েছে কিছুটা আক্ষেপ। কৃষ্ণনগরের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী গীতা পাল জানান, এখনও পুজোর অর্ডার খুব একটা আসেনি। প্রতিবছর ভালো অর্ডার পাই, এবারও আশাবাদী। তবে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। পুজো কমিটিগুলো বেশি দাম দিতে চায় না, ফলে লাভ কম হয়। রথ থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত আমাদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এই সময় সরকারি কোনও সাহায্য পেলে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারতাম।
পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে, শিল্পের এই অঙ্গনে পুরুষেরা কাঠামো তৈরি করছেন, মহিলারা রং তুলিতে সাজাচ্ছেন প্রতিমা, এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও পরিবারকে সাহায্য করছে। গোটা এলাকা যেন এক কর্মব্যস্ত শিল্পগ্রাম। এই শিল্পই বহু পরিবারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
রথযাত্রা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটা কৃষ্ণনগরের মতো শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক চক্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বহু মৃৎশিল্পী এই উৎসবকে ঘিরেই বছরের অনেকটাই রোজগার করে থাকেন।
তাই অর্ডার কম এলেও শিল্পীদের মনোবল টলেনি। তাঁরা মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে হয়তো অর্ডারের ঢল নামবে। তারই আশায় পালপাড়া জুড়ে চলছে নিঃশব্দ, কিন্তু প্রাণচঞ্চল এক শিল্প উৎসবের প্রস্তুতি।