মালদহ, রবিবার, ২২/০৬/২০২৫
ভারতীয় পরিচয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা—শেষ রক্ষা হল না। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মালদার মহদিপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ধরা পড়ল এক বাংলাদেশি নাগরিক। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের চোখে সন্দেহ হওয়াতেই ফাঁস হয়ে যায় তার ভুয়ো পরিচয়ের জাল। এরপর নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তাকে ইংরেজবাজার থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ধৃত তরুণের বিরুদ্ধে ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশ, নকল নথি তৈরি ও দুই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আদালত তাকে ছয়দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আরও বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত তরুণ ভারতে প্রবেশের সময় নিজেকে পরিচয় দেয় সেলিম শেখ নামে, বয়স ৩১। সে জানায়, তার বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার কালুখালি এলাকায়। ভারতীয় নাগরিক হিসেবেই তার কাছে ছিল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট ও ভিসা। এমনকি তার কাছ থেকে ভারতীয় মুদ্রাও উদ্ধার হয়। সবই দেখে প্রথমে সন্দেহ না হলেও, কাগজপত্র খতিয়ে দেখার সময় ইমিগ্রেশন আধিকারিকদের হাতে আসে একটি বাংলাদেশি পরিচয়পত্র—যার মাধ্যমেই ধরা পড়ে গোটা রহস্য।
পরিচয়পত্র যাচাই করে জানা যায়, ধৃত ব্যক্তি আদতে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। সেখানে তার আসল নাম মহম্মদ দিলওয়ার। ভারতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে সে বারংবার এদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে অনুমান।
ইংরেজবাজার থানার পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ধৃতের সঙ্গে কোনও আন্তর্জাতিক অনুপ্রবেশ চক্র যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে ছয়দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়, যা মঞ্জুর হয়েছে।
ঘটনাটি ঘিরে সীমান্তবর্তী এলাকায় ফের চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইমিগ্রেশন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি আনতে চলেছে প্রশাসন। সাইবার ফরেন্সিকের সাহায্যেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ধৃত তরুণ কীভাবে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করল, কে বা কারা তাকে এই কাজে সাহায্য করেছিল, তার পিছনে কোনও বড় অনুপ্রবেশচক্র সক্রিয় রয়েছে কি না।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফেও এই বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তদন্তে উঠে আসা তথ্যে স্পষ্ট—ধৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে এদেশে যাতায়াত করছিল। তার বিরুদ্ধে আরও কোনও মামলা রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনার পর মহদিপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে। প্রতিটি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র এখন আরও সতর্কভাবে যাচাই করা হচ্ছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
এ ধরনের অনুপ্রবেশ রুখতে ইমিগ্রেশন আধিকারিক ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে আরও সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধৃত তরুণকে পুলিশ হেফাজতেই রাখা হবে।