Site icon বাংলা খবর

বৃষ্টির অভাবে থমকে রয়েছে আমন চাষ, চিন্তায় চাষিরা

IMG-20250625-WA0025

মুর্শিদাবাদ, ২৫/০৬/২০২৫

বর্ষা সময়মতো শুরু না হওয়ায় মুর্শিদাবাদ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের চাষ কার্যত থমকে গেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রহর গুনছেন চাষিরা। বীজতলার ধানের চারার বয়স বেড়ে চলেছে, অথচ জমিতে এখনও জল দাঁড়ায়নি। অনেকেই বাধ্য হয়ে সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে জমিতে জল সেচ দিচ্ছেন। যাঁদের এই সুযোগ নেই, তাঁরা এখনও ভারী বৃষ্টির অপেক্ষায়।

জেলার কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। চাষিরা জুন মাসের শুরু থেকেই বীজতলা তৈরি করেন। সাধারণত চারার বয়স ২৫-২৮ দিনের মধ্যে ধান রোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ধরা হয়। এবারে সেই সময়সীমা প্রায় শেষের পথে, কিন্তু অধিকাংশ জমিতেই এখনও রোপণ শুরু করা যায়নি।

চাষিদের অভিযোগ, জুনের শেষ সপ্তাহ নাগাদ ধান রোপণ অনেকটাই এগিয়ে যায়, কিন্তু এবার জলের অভাবে গোটা প্রক্রিয়াই থমকে আছে। গত ক’দিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত হলেও তা চাষের জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়। জমিতে জল না দাঁড়ানোয় ট্রাক্টর নামানো যায়নি। বরং হালকা বৃষ্টিতে জমির ঘাস ও আগাছা দ্রুত বাড়ছে, যা পরে রোপণের সময় বাড়তি সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ললিতাপুর মৌজার আমন চাষি প্রশান্ত পাল বলেন, “জলের অভাবে এখনও জমি ভাঙতে পারিনি। এদিকে বীজতলার চারা চব্বিশ দিন পার করে ফেলেছে। আর দেরি হলে চারাগুলি নষ্ট হয়ে যাবে।” বিপুল বাগদি নামে আরেক চাষির মন্তব্য, “ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জমিতে পর্যাপ্ত জল আসেনি। বাধ্য হয়ে সাবমার্সিবলের জল কিনে জমি ভাঙতে হচ্ছে, যা অনেকের পক্ষে খুবই ব্যয়বহুল।”

নবগ্রাম ব্লক ও বড়ঞা ব্লকের কয়েকটি মৌজায় (যেমন ফতেপুর, বোলপাড়া) কিছু চাষি মঙ্গলবার থেকে জমিতে ট্রাক্টর নামিয়ে চাষ দিতে শুরু করেছেন। তাঁরা সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল তুলে জমি তৈরি করছেন। চাষের পর জমির মাটি কিছুদিন রেখে দিয়ে পচিয়ে আবার একবার চাষ দিয়ে চারা রোপণ করতে হয়। তাই সময়মতো জমি তৈরি না হলে পুরো রোপণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাবে।

তবে কৃষিদপ্তর সূত্রের দাবি, এখনও আমন চাষের জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চারা রোপণ সম্ভব। তাই এখনই চাষিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছে প্রশাসন। যদিও চাষিরা বলছেন, প্রকৃতির ওপর ভরসা করা এখন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। সময়মতো বৃষ্টি না হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

মুর্শিদাবাদের বহু চাষিই এবারে সময়ের আগেই ধানের বীজতলা করেছিলেন। কিন্তু বর্ষা সঠিক সময়ে না আসায় রোপণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাস থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতিতে চাষিরা এখন জলের জোগান নিশ্চিত করতে না পারলে আমন চাষ মার খেতে পারে। ফলে অনেকেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাবমার্সিবল কিংবা পাম্পসেটের জলের দিকে ঝুঁকছেন। তবে সবার পক্ষে তা করা সম্ভব না হওয়ায় সমাধানের জন্য প্রয়োজন দ্রুত ভারী বৃষ্টিপাত—যা প্রকৃতিরই হাতে।

Exit mobile version