
পুরী, উড়িষ্যা, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৫
বিশ্ববিখ্যাত পুরীর রথযাত্রা এ বছর সাক্ষী থাকল এক অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলার। প্রশাসনের তরফে নেওয়া কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে কার্যত অচল হয়ে পড়ে গোটা আয়োজন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে শ্রীজগন্নাথদেবের রথ নান্দীঘোষ ঠিক সময়ে যাত্রা শুরুই করতে পারেনি। উৎসবের উত্তেজনা ও ভক্তদের ঢল শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় বিশৃঙ্খলায়। গনচাপা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ৬০০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
অতিরিক্ত ভিড় এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বহু ভক্ত জখম হন, পড়ে যান রথের রশিতে টান দিতে গিয়ে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ কোনোরকমে প্রতীকী রূপে টান দেওয়া হয় জগন্নাথদেবের রথে। রাত হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রথযাত্রা সম্পূর্ণ করা যায়নি। ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন অবশ্য দাবি করেছেন, “এটি বড় কোনও ঘটনা নয়। সূর্যাস্তের পরে রথ না টানা, বা পরদিন রথ টানার রেওয়াজ নতুন কিছু নয়। সবকিছুই রীতি মেনেই হয়েছে।”
মন্ত্রী আরও জানান, এ বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি ভক্ত উপস্থিত হন পুরীতে। এত বিশাল ভিড় সামাল দিতে প্রশাসনের প্রস্তুতি যথেষ্ট ছিল না বলেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সেই কারণেই সময়মতো রথ টানা সম্ভব হয়নি। যদিও এদিন যথারীতি ‘ছেরা পাহানরা’ রীতিতে পুরীর গজপতি মহারাজ সাদা পোশাকে সোনার ঝাঁটা হাতে শ্রীমন্দিরে হাজির হয়ে তিনটি রথ ও তাদের সামনে রাস্তা ঝাঁট দেন। এই ঐতিহ্য বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে, যার অর্থ—জগন্নাথই সর্বোচ্চ, রাজাও তাঁর সেবক।
এদিনের ঘটনায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বলরামের রথ তালধ্বজ গিয়ে আটকে যায় বালাগান্ডি চকের কাছে। তার ঠিক পিছনে থাকা সুভদ্রার রথ দর্পদলন পুরী শহরের ভিতরে থেমে যায়। জগন্নাথদেবের রথ নান্দীঘোষ শেষ পর্যন্ত স্রেফ প্রতীকীভাবে কিছুটা এগোয়। রাত আটটার পর, সূর্যাস্ত হয়ে যাওয়ায় রথ টানা স্থগিত করা হয়। ঘোষিত হয়েছে, শনিবার সকালে ফের রথ টানার কাজ শুরু হবে, এবং তখন রওনা দেবে তিনটি রথ মাসির বাড়ি, গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তদের ঢল নামে পুরীতে। ‘পাহান্ডি’ রীতিতে সেবায়েতরা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তিকে কাঁধে করে মন্দির থেকে রথে বসিয়ে দেন। তারপর পুরীর গজপতি রাজা নিজে রথের সামনে সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করেন, যাকে বলা হয় ‘ছেরা পাহানরা’। এই রীতির মাধ্যমে প্রমাণ হয়, জগন্নাথই জগতের একমাত্র অধীশ্বর, তাঁর কাছে রাজাও কেবল একজন সেবক।
পুরীর রথযাত্রা শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভক্তি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু এবারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি রাজ্য প্রশাসনের প্রস্তুতির প্রশ্ন তুলছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কী ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন, এখন সেদিকেই নজর সকলের।