
মুর্শিদাবাদ, ২৫/০৬/২০২৫
২৩ জুন—বাংলার ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ১৭৫৭ সালের এই দিনেই সংঘটিত হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধ, যেখানে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন। ইতিহাসের এই কালো অধ্যায় আজ ২৬৮ বছরে পদার্পণ করল।
মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার এক ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে প্রতিহত করে ব্রিটিশ বণিকেরা সেই যুদ্ধে রাজদণ্ড দখল করে নেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হলেও কার্যত নিরপেক্ষ থেকে নবাবের সেনাপতি মীরজাফর কূটকচাল ও লোভের জালে জড়িয়ে ইংরেজদের হাতে তুলে দেন স্বাধীন বাংলার ভাগ্য। এই যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই অস্ত যায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য, এবং শুরু হয় ঔপনিবেশিক শাসনের এক দীর্ঘ ও শোষণমুখর অধ্যায়।
পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাই নয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়। একসময়কার ধনাঢ্য ও গৌরবময় বাংলাকে রূপান্তরিত হতে হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের করুণ উপনিবেশে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এই যুদ্ধ ছিল এক ‘যুদ্ধ’ নয়, ছিল এক ‘ষড়যন্ত্র’—যেখানে বাণিজ্যিক স্বার্থ ও আভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতা মিলেমিশে তৈরি করেছিল পরাধীনতার পথ।
আজও ২৩ জুন এলেই মুর্শিদাবাদের পলাশী স্মৃতিসৌধে নীরব শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ইতিহাসপ্রেমী মানুষজন। নবাব সিরাজ, তাঁর সেনানী মোহনলাল, মীর মদনদের স্মরণে জ্বলতে থাকে প্রতিবাদের মশাল।
পলাশী আমাদের ইতিহাসের গর্ব নয়, বরং সতর্কবার্তা—ভবিষ্যতের যেকোনো চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতার বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ থাকার।
আজও বাংলার আকাশে গুঞ্জন তোলে সেই প্রশ্ন—আমরা কি সত্যিই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছি?