
কলকাতা, ২৪/০৬/২০২৫
পাঞ্চেত ড্যামের জলস্তর ৪১৪.১৮ ফুটে পৌঁছনোর আগেই হঠাৎ বিপুল পরিমাণ জল ছেড়ে দিল ডিভিসি। অথচ জলাধারের পূর্ণ জলধারণ ক্ষমতা ৪৩৫ ফুট। ফলস্বরূপ, দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার এবার ডিভিসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাল দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটরি কমিটিকে (ডিভিআরআরসি)।
জল ছাড়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে—যেমন: কেন আগাম সতর্কতা ছাড়াই এত বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হল? কেন নিয়ম মেনে অল্প অল্প করে আগে থেকে জল ছাড়া হল না? এই সব প্রশ্ন তুলে সেচ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মণীশ জৈন একটি বিশদ অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন ডিভিআরআরসি-র কাছে। চিঠিতে ২০ জুন থেকে জল ছাড়ার পরবর্তী কয়েকদিনের বিস্তারিত পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
বিষয়টি ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। এদিন বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “ডিভিসি কোনওরকম আগাম বার্তা না দিয়ে, চুক্তি লঙ্ঘন করে একসঙ্গে ৭১ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে তেনুঘাট, মাইথন ও দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে। এর ফলে হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকা হিসেবে উঠে এসেছে ঘাটাল, আরামবাগ, গঙ্গাজলঘাটি ও উদয়নারায়ণপুরের নাম। বহু এলাকা জলের তলায়, ফসল নষ্ট, বাড়িঘর ভেঙেছে, হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।
রাজ্যের অভিযোগ, ডিভিসির এই “খামখেয়ালি মনোভাব” আগেও দেখা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও এর আগেও একাধিকবার ডিভিসির ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এবারের ঘটনায় তিনিও ব্যক্তিগতভাবে নজর রাখছেন বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যে ওষুধ, পানীয় জল, অস্থায়ী ক্যাম্প ও ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডিভিআরআরসি এবার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে স্পষ্ট, এবার রাজ্য-ডিভিসি সংঘাতের আঁচ পৌঁছেছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মঞ্চে।