
কান্দি, শনিবার, ২১/০৬/২০২৫ :-
মনসামঙ্গল কাব্যের চাঁদ সওদাগরের নাম আজও বাঙালির মুখে মুখে। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি শহরের অদূরবর্তী পার্বতীপুর এলাকায় রয়েছে এমন এক মনসা মন্দির, যাকে ঘিরে ঘোরে শতাব্দীপ্রাচীন এক জনশ্রুতি। লোককথা অনুযায়ী, এই মন্দিরেই চাঁদ সওদাগর প্রথমবার মা মনসার পুজো করেন — তাও আবার বাঁ হাতে।
শোনা যায়, একদিন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কানা ময়ূরাক্ষী নদী পথে যাওয়ার সময় চাঁদের নৌকায় সমস্যা দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি পার্বতীপুরের কাছে নৌকা থামিয়ে নদীর ধারে একটি তেঁতুল গাছে বেঁধে দেন। সেখানেই দেখতে পান একটি ছোট মন্দির — মা মনসার আস্তানা। শিবভক্ত চাঁদ সওদাগর পুজো করেছিলেন, তবে ডান হাতে নয়, বাঁ হাতে। লোকশ্রুতি বলছে, এই ঘটনাই বাঙালি ঘরে ঘরে মনসা পূজোর সূচনা ঘটায়।
আজও কানা ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে, শতবর্ষ প্রাচীন সেই তেঁতুল গাছের নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছে মনসা মন্দির। চাঁদের স্মৃতিকে ঘিরে বিশ্বাস, ভক্তি ও লোককথার ধারাবাহিকতায় মন্দিরটি আজও প্রাণবন্ত। বর্তমানে এই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কান্দির প্রখ্যাত জেমো রাজ পরিবার।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মলয় চক্রবর্তীর কথায়, “চাঁদ সওদাগরের পুজোর এই গল্প আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি। যদিও তার ঐতিহাসিক সত্যতা অজানা, কিন্তু ভক্তদের বিশ্বাস আজও অটুট। প্রতিদিন বহু মানুষ তাঁদের মনোবাঞ্ছা নিয়ে এখানে আসেন। আগে পুজোর সময় বহু পশুবলি হত, এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। মা মনসার উদ্দেশ্যে বিশেষ পায়েস ও ফল প্রসাদ নিবেদন হয়।”
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ১৫ দিনের মনসা উৎসব ও মেলা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভক্তের উপস্থিতিতে কান্দির পার্বতীপুরে তখন যেন ইতিহাস ও লোককথার আবেশে জেগে ওঠে এক অনন্য ধর্মীয় আবহ।
চাঁদ সওদাগরের পুজো, বাঁ হাতের সেই স্মরণীয় নিবেদন আর কানা ময়ূরাক্ষীর কোলঘেঁষা মনসা মন্দির — সব মিলিয়ে এই স্থান বাঙালির লোকস্মৃতিতে গাঁথা এক অনুপম আধ্যাত্মিক ঠিকানা।