
নয়াদিল্লি, মঙ্গলবার, ২৪/০৬/২০২৫
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প ‘পিএম-দক্ষ কর্মসূচি’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়েই এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। তবে বাস্তবের ছবিটা উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছিল, বাস্তব প্রয়োগ তার ধারে-কাছে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি।
২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে প্রায় ২ লক্ষ ৭১ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার জন্য বরাদ্দ হয় ৪৫০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। অথচ ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন সারা দেশে মাত্র ৩০ হাজার ৬৬০ জন। অর্থাৎ প্রকৃত অর্জন লক্ষ্যের মাত্র এক অংশ!
এই বছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১০ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা, যার সিংহভাগই বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে দেওয়া হয়েছে। তবু সেসব রাজ্যেও পরিস্থিতি করুণ।
উত্তরপ্রদেশে বরাদ্দ হয়েছে ৩০.৮৩ কোটি, প্রশিক্ষণ পেয়েছেন মাত্র ৮,১৪৪ জন। ত্রিপুরায় ৭৫ লক্ষ টাকায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ২০২ জন। উত্তরাখণ্ডে ১.৮১ কোটি টাকায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৫৭০ জন। মধ্যপ্রদেশে ২৩.১১ কোটি টাকায় প্রশিক্ষিত ৬,২৩১ জন। মহারাষ্ট্রে ১৪.১৮ কোটি টাকায় প্রশিক্ষিত ৩,৭৭৩ জন। গুজরাতে মাত্র ৭২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাত্র ২৬৬ জন। হরিয়ানায় ১.৮৬ কোটি টাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬৬৯ জন।
এই সব পরিসংখ্যান দেখেই স্পষ্ট, ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’ চালিত রাজ্যগুলিতেও প্রকল্পের সাফল্য নেই বললেই চলে। কোনও রাজ্যেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তের সংখ্যা ১০ হাজারের গণ্ডি পেরোয়নি।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এত বড় মাপের প্রকল্পের জন্য যে বরাদ্দ, সেই তুলনায় বাস্তবায়ন যথেষ্ট দুর্বল। নীতি ও পরিকল্পনার মধ্যে বিস্তর ফারাক স্পষ্ট।
যেখানে দেশজুড়ে বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগ তুঙ্গে, সেখানে এমন একটি কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্পে এই রকম ব্যর্থতা বিরাট প্রশ্নচিহ্নের জন্ম দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে।
‘ঘোষণার বেশি, কাজের কম’—এই অভিযোগে যে আরও জোরাল হল বিরোধী দলগুলোর হাত, তা বলাই যায়। এখন দেখার, এই রিপোর্ট সামনে আসার পর কেন্দ্র কতটা জবাবদিহি করতে প্রস্তুত।