
সোমবার, ৩০/০৬/২০২৫
কাশবা আইন কলেজে এক ছাত্রীর সঙ্গে গণধর্ষণের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে নিন্দার ঝড়। এই স্পর্শকাতর ঘটনার পর তৃণমূলের দুই প্রভাবশালী নেতা—শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র দ্বারা প্রকাশ্যে দেওয়া মন্তব্য ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিতর্কের নতুন তরঙ্গ।
গত শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় এক্স (X) হ্যান্ডলে দলের তরফে সাফ জানানো হয়—এই দুই নেতার বক্তব্যকে দল কোনওভাবেই সমর্থন করে না, বরং নিন্দা করছে।
এই ঘোষণার ঠিক দু’দিন পর, রবিবার মদন মিত্রকে পাঠানো হয় শোকজ় নোটিস। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোমবার সকাল পর্যন্ত কোনও দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন—একই ইস্যু, একই সমালোচনা, তবু শাস্তির ফারাক কেন?
তৃণমূলের তরফে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও দলীয় অন্দরমহলে জোর আলোচনা চলছে। দলের এক প্রবীণ নেতার যুক্তি, মদন মিত্রের বক্তব্য ছিল চূড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক এবং অসংবেদনশীল। তিনি নির্যাতিতার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্টোদিকে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। তিনি রক্ষকরা ভক্ষক হয়ে উঠলে সমাজের নিরাপত্তা কোথায়—এই প্রশ্ন তুলে ধরেন। এমনকি দলের অভ্যন্তরেও আত্মসমালোচনার সুর ছিল তাঁর বক্তব্যে, যেখানে তিনি প্রশ্ন করেন, “২০১১ সালের পরে দলে আসা এই নেতাদের প্রশ্রয় দেয় কারা?”
শাসকদলের এক নেতা বলেন, “মদন মিত্রের বক্তব্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আদালতে উদ্ধৃত করতে পারেন। মেয়েটি কেন একা কলেজে গিয়েছিলেন, কেন সঙ্গে কাউকে নেননি—এসব প্রশ্ন একেবারে অনুচিত। এই মানসিকতা ধর্ষণের দায় মেয়েদের ঘাড়ে চাপানোর মতোই।”এই কারণেই তৃণমূলের শীর্ষ মহল মদনের বিরুদ্ধে তৎপরভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, আপাতত মদনের শোকজ়ের জবাবের দিকেই নজর রেখেছে দল। তবে তিনি যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আরও বড় শাস্তির সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। একাধিক তৃণমূল নেতার দাবি, “‘কালীঘাট’-এর মনোভাব বেশ কঠোর। দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিকভাবে স্পষ্ট বার্তা দিতেই হবে।”
কাশবার মতো ভয়াবহ অপরাধের ঘটনায় দলীয় নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে দলকে যে ব্যাকফুটে যেতে হচ্ছে, তা স্পষ্ট। কিন্তু সমান তালে সমালোচিত হলেও শাস্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য তৃণমূলের নৈতিক অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন তুলছে।
দল কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।