
হুগলি, শনিবার, ২১/০৬/২০২৫ :-
নিম্নচাপের বৃষ্টি ও ডিভিসি-র জল ছাড়ার কারণে হুগলির আরামবাগ মহকুমার একাধিক নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। ফলে এলাকায় প্লাবনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে গোঘাট ও খানাকুল এলাকার ১২৪টি স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে যেমন পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে, তেমনই স্কুলগুলিকে প্রয়োজনে ত্রাণ শিবির হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার পর্যন্ত যদিও কোনও এলাকা প্লাবিত হয়নি, তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এদিন নবান্নের তিন শীর্ষকর্তা সহ অতিরিক্ত মুখ্য সচিব আরামবাগে পরিদর্শনে আসেন। তাঁরা মহকুমা শাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং খানাকুল-১ ও ২ নম্বর ব্লকের নদীবাঁধ নির্মাণাধীন এলাকা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনে ছিলেন আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া, জেলাশাসক মুক্তা আর্য, হুগলি গ্রামীণ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায়-সহ একাধিক আধিকারিক।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রবল বৃষ্টির জল দ্বারকেশ্বর ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর মাধ্যমে আরামবাগ হয়ে রূপনারায়ণে মিশছে। ফলে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে। মারোখানা, ধান্যঘোরী ও হানুয়া-সহ একাধিক এলাকার নদীবাঁধের উপর চাপ তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত পাল বলেন, “দুই নদীতেই স্রোত বেড়েছে, তবে এখনও উপচে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়নি।”
অন্যদিকে, সাহেব পোড়ে জানান, “ধান্যঘোরীর বাঁধের উপর জলস্তর কিছুটা নিচে থাকলেও, যে কোনও সময় তা কানায় কানায় পৌঁছাতে পারে।”
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দী বলেন, “৭৭টি প্রাথমিক ও জুনিয়র স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে পঠনপাঠন স্বাভাবিক হবে।”
আরামবাগের এসআই রথীন বিশ্বাস জানান, “৪৭টি জুনিয়র ও হাইস্কুলে ছুটি দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে ত্রাণ শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হবে।”
এদিন আরামবাগ শহরের বাঁধপাড়া এলাকায় বৃষ্টির জলে জল জমে যায়। পরে পুরসভার পক্ষ থেকে পাম্প বসিয়ে সেই জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর ভাণ্ডারী বলেন, “দ্বারকেশ্বরে জল নামছে, তবুও আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”
অতিরিক্ত মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, জুন মাসের মধ্যেই নদীবাঁধের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কিছু এলাকায় কাজের গতি বাড়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সতর্ক প্রশাসন, প্রস্তুত স্থানীয় প্রশাসনিক পরিকাঠামো—তবুও প্রকৃতির রূপ বদলালে কতটা সামাল দেওয়া যাবে, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে আরামবাগবাসী।