



রিপোর্ট প্রশান্ত সাহা
জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, শুক্রবার, ২৭/০৬/২০২৫
মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে শুক্রবার পড়ল রথের দড়িতে টান। আর সেই টান যেন শুধু দেবতার রথ নয়, বরং টান এক প্রাচীন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর হাজারো মানুষের আবেগের। প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সাধকবাগ বড় আখড়ার রথযাত্রা এদিন শুরু হল জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে। রথের দিন সকালবেলায় শাস্ত্রমতে শালিগ্রাম শিলার অভিষেকের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রথযাত্রার। এরপর ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা ও শঙ্খধ্বনির সঙ্গে পালিত হয় পূজার যাবতীয় নিয়ম-কানুন। আখড়া প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে ভক্তদের স্তুতিসঙ্গীতে। বহু প্রাচীনকাল থেকে সাধকবাগ আখড়ার এই রথযাত্রা জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার পূজাকে কেন্দ্র করে হয়ে আসছে। এই রীতিনীতির ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত। পূজার পরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—রথ টানা। রীতিমতো উত্সবের আবহে ভক্তরা হাতে তুলে নেন রথের দড়ি। “জয় জগন্নাথ” ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস গমগম করে ওঠে। রথ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে। পুরীর ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার অনুকরণে এখানে পালন করা হয় এই উৎসব, যা স্থানীয় মানুষজনের কাছে এক বিশাল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। এই উপলক্ষে আখড়া ময়দানকে ঘিরে বসে বিশাল মেলা। থাকে পুতুলনাচ, যাত্রাপালা, নাগরদোলা থেকে শুরু করে হস্তশিল্প ও নানা স্থানীয় খাদ্যপণ্যের দোকান। প্রায় নয় দিন ধরে চলা এই মেলায় অংশ নেন জিয়াগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সন্ধ্যাবেলায় অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে স্থানীয় শিল্পীরা লোকগান, কবিগান ও নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন বাংলার সংস্কৃতি। এই রথোৎসব শুধু একটি ধর্মীয় আচার বা মেলা নয়—এটি জিয়াগঞ্জ তথা মুর্শিদাবাদের হাজারো মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক মহোৎসব। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই রথযাত্রা বয়ে চলেছে বাংলার লোকসংস্কৃতির এক জীবন্ত ধারাবাহিকতা। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল চক্রবর্তী বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই এই রথে দড়ি টেনে এসেছি। যতবার এই দড়ি হাতে নিই, মনে হয় যেন অতীতের সঙ্গে এক আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়।” জিয়াগঞ্জের সাধকবাগ বড় আখড়ার এই রথযাত্রা যেন গ্রামবাংলার ভক্তি, ঐতিহ্য ও সামাজিক ঐক্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক।