Site icon বাংলা খবর

বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ রাজস্থানে আটক ৩০০ পরিযায়ী—তীব্র প্রতিক্রিয়ায় নবান্ন, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মুক্ত বঙ্গবাসী

IMG-20250625-WA0026

কলকাতা, ২৫/০৬/২০২৫

শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে এবার উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের প্রায় ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে রাজস্থানের ভিবাডি পুলিশ। ভাষাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে এভাবে হেনস্তার ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর নবান্নের হস্তক্ষেপে মুক্তি পান ওই শ্রমিকেরা।

সূত্র অনুযায়ী, রাজস্থানের ভিবাডিতে ইটাহার বিধানসভা এলাকার খিসাহার এবং আশপাশের গ্রামের প্রায় ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে আটক করে রাখা হয় ইউআইটি সেক্টর-৫-এর একটি সরকারি আবাসনে। রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন এই ঘটনার অভিযোগ জানানোর পরেই নবান্ন থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কড়া ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন,
“বাংলায় কথা বললেই কি এখন বাংলাদেশি? ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন এই হেনস্তা? বাংলার মানুষকে অসম্মান করা হলে আমরা চুপ থাকব না। এই ভাষাবিদ্বেষের প্রতিবাদে পথে নামব।”

তিনি আরও জানান, রাজস্থান প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। পাশাপাশি কেন্দ্র এবং রাজস্থান সরকারকে নবান্ন থেকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই সক্রিয় হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনিক তৎপরতার জেরে বিকেলের মধ্যে আটক শ্রমিকদের মুক্তি দেয় রাজস্থান পুলিশ।

ভিবাডি থেকে ফোনে এক পরিযায়ী শ্রমিক সায়েদ আলি জানান,
“পুলিশ হঠাৎ এসে আমাদের তুলে নিয়ে যায়। বলে, আমরা নাকি বাংলাদেশি! বহু ঘণ্টা আটকে রেখে জেরা করে পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে অবশেষে বিকেলে ছেড়ে দেয়।”

প্রসঙ্গত, এর আগেও মহারাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে মুর্শিদাবাদের তিন বাসিন্দা এবং পূর্ব বর্ধমানের একজনকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছিল। এবার রাজস্থানেও সেই একই চিত্র দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি,
“বাংলার বাসিন্দাদের এভাবে হেনস্তা চলতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানাব।”

ঘটনাটি শুধু একটি প্রশাসনিক ভুল নয়, বরং তা ভারতীয় গণতন্ত্রে ভাষাগত বৈচিত্র্যের উপর সরাসরি আঘাত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। নবান্নের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের স্বাধীনতা ফিরে পেলেও, এই ঘটনার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া বহুদূর পর্যন্ত গড়াতে পারে বলেই ধারণা। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ও প্রতিবাদে সাময়িক সমাধান মিললেও, ভাষা নিয়ে বিদ্বেষমূলক এই প্রবণতা রুখতে এখনই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

Exit mobile version