
ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ , রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ :-
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ২ ব্লকের আখরিগঞ্জ থেকে বহরমপুরের সঙ্গে সংযুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি শতাব্দীপ্রাচীন ব্রিজ—যার পরিচিতি “আট মুখ ক্যানেল নহর পাড়ার ব্রিজ” নামে। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ব্রিজটির নির্মাণ হয়েছিল ১৮৯৫ সালের দিকে, অর্থাৎ নবাবি আমল বা ব্রিটিশ শাসনকালেই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কোনো রকম সংস্কারের মুখ দেখেনি এই সেতু। অথচ এটি প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা। রাস্তার বিকল্প নেই, নতুন ব্রিজের কথা শুধু লোকমুখে শোনা যায়, বাস্তবে প্রশাসনের তরফে কোনও স্পষ্ট ঘোষণা নেই।
এই সেতুটি একদমই সরু। একটি চারচাকা গাড়ি উঠলে অন্য দিকের যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে দিনে বহুবার বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। আশেপাশের গ্রামগুলোর মানুষ, স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী, বাজারের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স—সবারই একমাত্র ভরসা এই ব্রিজ। অথচ, ঠিক এই ব্রিজেরই অবস্থা আজ এতটাই নাজুক যে যেকোনো সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটাই আশঙ্কার মূল কথা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “একটা চারচাকা উঠলে অন্য গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্স ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। এই যুগে এক মিনিটেরও দাম, সেখানে রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানেই জীবনের সঙ্গে লুকোচুরি।”
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এলাকাবাসীরা শুনে আসছেন পাশ দিয়ে বিকল্প রাস্তা হবে, নতুন ব্রিজ হবে। কিন্তু বাস্তবে আজও নেই কোনও সরকারি পদক্ষেপ, নথিভুক্ত পরিকল্পনা তো দূরের কথা। এলাকাবাসীরা একাধিকবার বিধায়ক, বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন। প্রতি বারই আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আহসানুর রহমান বাপন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এই ব্রিজটি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এটি ইউ-আকৃতির, তাই একে স্টেট ব্রিজ করা যায় কিনা, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। বিষয়টি তৃণমূল কংগ্রেসের কান্দির বিধায়ক তথা বহরমপুর জেলা সভাপতির নজরে রয়েছে।”
মোহাম্মদপুর অঞ্চলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শিখা বিবি জানান, “আমি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও বিডিও সাহেবকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, ব্রিজটি সংস্কার করা হবে।”
কিন্তু আশ্বাসের চেনা গল্পে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। তাদের প্রশ্ন—এই আশ্বাসই কি চূড়ান্ত উত্তর? কবে হবে বাস্তব কাজ? যদি আগামীকাল কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তবে তার দায়ভার কে নেবে?
এখন স্থানীয় মানুষের দাবি একটাই—এই ব্রিজ অবিলম্বে সংস্কার করতে হবে এবং পাশ দিয়ে একটি নতুন ডাবল লেন ব্রিজ তৈরি করতে হবে, যাতে যান চলাচলে আর কোনও বিঘ্ন না ঘটে। প্রতিদিনের এই জ্যাম, উদ্বেগ, ঝুঁকি এবং অকারণ সময় নষ্টের অবসান চাই।
একটি ব্রিজ ভেঙে পড়া মানেই শুধু কাঠামোর ধস নয়, সেটা আসলে প্রশাসনিক অবহেলার প্রতিচ্ছবি। মুর্শিদাবাদের মানুষের প্রাণের সেতু যখন ফাটল ধরতে ধরতে ভাঙনের পথে এগোচ্ছে, তখন প্রশ্ন একটাই—আশ্বাসে আর কতদিন চলবে?