Site icon বাংলা খবর

দৌলতাবাদে বাল্যবিবাহ রোধে জোরদার পদক্ষেপ, পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভায় ধর্মীয় ও প্রশাসনিক বার্তা

BALLO BIBHAHO DOULATABAD

দৌলতাবাদ, মুর্শিদাবাদ, বৃহস্পতিবার, ২৬/০৬/২০২৫

বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধির বিরুদ্ধে এবার সরব হল দৌলতাবাদ থানার অন্তর্গত গুরুদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল এক সচেতনতামূলক সভা, যার মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই প্রথা রোধে প্রশাসন ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগকে শক্তিশালী করা।

এই গুরুত্বপূর্ণ সভার সভাপতিত্ব করেন পঞ্চায়েত প্রধান স্বপ্না খাতুন। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ইমাম ও মোয়াজ্জেম, আশা কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, পঞ্চায়েত সদস্য ও অন্যান্য কর্মীবৃন্দ। সভায় গ্রামবাসীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান স্বপ্না খাতুন বলেন, “বাল্যবিবাহ কোনো নিরীহ সামাজিক রীতি নয়—এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে তাদের জীবনে চিরস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনে। আমাদের সবার কর্তব্য হলো এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে সরব হওয়া।” তিনি আরও জানান, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা এবং জনসচেতনতা—এই দুইয়েরই প্রয়োজন।

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এলাকার সম্মানীয় মোয়াজ্জেম বাল্যবিবাহকে ইসলামবিরোধী বলে উল্লেখ করে বলেন, “ইসলাম কখনোই মানসিক ও শারীরিকভাবে অপরিপক্ব ছেলেমেয়েদের বিয়েকে সমর্থন করে না। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে এই প্রথাকে চালিয়ে যাওয়া একান্তই অনুচিত।” বক্তারা জানান, অজ্ঞতা, দারিদ্র্য, সামাজিক চাপ ও কুসংস্কার—এই চারটি প্রধান কারণেই এখনও সমাজে বাল্যবিবাহ প্রচলিত। আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের ও ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রশাসনকে জানালে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয় সভা থেকে।

সভা শেষে সকলের উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়—“বাল্যবিবাহ রুখতে সমাজের প্রতিটি মানুষেরই সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শুধু প্রশাসন নয়, সমাজের অভিভাবকরাও এই লড়াইয়ে সমান গুরুত্বপূর্ণ।”

পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগকে ঘিরে গ্রামে দেখা গেছে এক ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি। গ্রামের অনেকেই বলছেন, এ ধরনের সচেতনতামূলক সভা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকলে সমাজ ধীরে ধীরে বদলাবে। গুরুদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রশাসনের সক্রিয়তা ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সচেতনতা মিশে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—এই সমাজে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে এমন কোনও প্রথার আর জায়গা নেই।

Exit mobile version