
কাটোয়া, শনিবার, ২১/০৬/২০২৫
পাসপোর্টে লেখা ‘ভারতীয় নাগরিক’, সঙ্গে নকল আত্মীয়ের ছত্রছায়ায় ‘স্বাভাবিক’ বিদেশযাত্রা— কিন্তু ইমিগ্রেশন কাউন্টারে ধরা পড়ল চাতুরীর জাল। কাটোয়া থেকে জাল ভারতীয় পাসপোর্টে কুয়েতে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক বাংলাদেশি যুবক। তার সঙ্গে ছিল দু’জন— যারা পরিচয় দিয়েছিল ‘জ্যেঠু’ ও ‘জ্যেঠিমা’ হিসেবে।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে কাটোয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। প্রশ্ন উঠেছে— এতটা সাবলীলভাবে কিভাবে তৈরি হল জাল পাসপোর্ট এবং আত্মীয় পরিচয়পত্র?
সূত্রের খবর, ধৃত বাংলাদেশি যুবক গত কয়েক মাস ধরেই ভারতীয় পরিচয়ে কাটোয়াতে বসবাস করছিল। কুয়েতে কাজের সুযোগ পেয়ে সে এক ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে তৈরি করায় ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট এবং পরিচয়পত্র।
পাসপোর্টে তাকে ‘ভারতীয় নাগরিক’ প্রমাণ করার জন্য তার জ্যেঠু ও জ্যেঠিমা হিসেবে জাল পরিচয়পত্রধারী আরও দু’জনকে ‘সঙ্গী’ হিসেবে দেখানো হয়।
কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ের সময় আধিকারিকদের সন্দেহ হয়। বিভিন্ন নথি যাচাই করে দেখা যায় পাসপোর্ট এবং পরিচয়পত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। পরে ত্রিমূর্তিকেই আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ধৃত যুবক বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা।
দীর্ঘদিন ধরেই জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক ভুয়ো নথি তৈরি করে ভারতের নাগরিকত্ব দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল।
জাল পাসপোর্ট তৈরিতে জড়িত একটি আন্তঃরাজ্য এজেন্ট চক্রের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। ‘জ্যেঠু-জ্যেঠিমা’ পরিচয়ে থাকা দুই সহযাত্রীরাও আসলে পেশাদার পাচারচক্রের সদস্য বলে সন্দেহ।
কাটোয়া থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “পাসপোর্ট জালিয়াতি ও বেআইনি বিদেশযাত্রার চেষ্টার অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করে ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ ও অভিবাসন দফতর সাধারণ নাগরিকদের সাবধান করে জানিয়েছে— বিদেশযাত্রার আগে সমস্ত নথি যাচাই করুন এবং সন্দেহজনক এজেন্ট বা পরিচয়পত্র বানানোর ফাঁদে পা দেবেন না।
কাটোয়ায় ধৃত বাংলাদেশি যুবকের ঘটনা ফের একবার স্পষ্ট করে দিল— ভুয়ো নথি আর নকল আত্মীয়তার মোড়কে লুকিয়ে থাকা আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্র এখনও সক্রিয়। প্রশাসনের নজরদারি ও তৎপরতাই এর প্রতিরোধে বড় হাতিয়ার।