
নয়াদিল্লী, শনিবার, ২৮/০৬/২০২৫
‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের মধ্যেই এবার এই বিতর্কিত প্রস্তাবকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সম্প্রতি তিনি এই বিষয়ে সংসদীয় কমিটির কাছে নিজের মতামত জমা দিয়েছেন, যেখানে তিনি একযোগে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে সওয়াল করেন এবং বিরোধী দলগুলির তোলা বেশ কিছু মৌলিক যুক্তিকে সরাসরি খণ্ডন করেন।
চন্দ্রচূড় স্পষ্ট করে বলেন, “সংবিধান রক্ষার অন্যতম শর্ত হল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, শুধুমাত্র আলাদা আলাদা সময় নির্বাচন করলেই তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। একযোগে ভোট হলে জনগণের ভোটাধিকার খর্ব হয়— এই যুক্তির কোনও ভিত্তি নেই।”
বিরোধী শিবির বারবার বলে এসেছে, একসঙ্গে ভোট হলে তা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত হানবে, এবং কেন্দ্রীয় শাসকের সুবিধা হয়— এই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মতে, “ভোট একসঙ্গে হলে গণতান্ত্রিক কাঠামো বিপন্ন হয়— এই আশঙ্কা ভিত্তিহীন। বরং এতে প্রশাসনিক ব্যয় কমে, নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হয়।”
চন্দ্রচূড়ের সবচেয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এসেছে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে। তিনি মত দিয়েছেন, “কোনও রাজ্যে ভোট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা উচিত।”
এই মন্তব্য নিয়েই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে এটি বড়সড় ধাক্কা। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই মতামতের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছে।
‘এক দেশ, এক ভোট’ প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার একটি উচ্চস্তরের কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সেই কমিটিকে দেওয়া মতামতেই চন্দ্রচূড় এই মন্তব্য করেছেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য বিজেপির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনের রাজনৈতিক প্রচারে। অন্যদিকে, বিরোধীদের জন্য এটি এক কঠিন বার্তা, কারণ নির্বাচন সংক্রান্ত সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে চন্দ্রচূড়ের মতামতকে অনেকেই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখেন।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে— গণতন্ত্রে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নাকি প্রশাসনিক সরলীকরণই বড়? ‘এক দেশ, এক ভোট’ কার্যকর হলে তার বাস্তবায়ন ও সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, এখন সেদিকেই নজর দেশের রাজনৈতিক মহলের।